বাংলাদেশে ডেলিভারি ব্যবসা: সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ

·

অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন, শুরু থেকে উবার এখন পর্যন্ত লসে আছে। তারা এখনো ব্রেক ইভেনে যেতে পারে নাই। সম্প্রতি The Business Standard নিউজ করেছে যে ফুডপান্ডা তাদের এশিয়াতে বিজনেস সেল করার চিন্তা করছে

এই বিষয়ে একজন বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে আমার পার্সপেক্টিভ শেয়ার করবো। এই বছরের শুরুর দিকে একটা লজিস্টিকস কোম্পানির বিজনেস প্ল্যান নিয়ে কনসালটেশনের জন্য রিসার্চ করেছিলাম, সেখান থেকেও কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।

কি কি টপিক আছে

সমস্যা অনেক!

একটা কথা প্রচলিত আছে যে ডিসকাউন্ট না দিলে বাংলাদেশের পাবলিক খায় না। আবার অর্ডার দিয়ে রিসিভ না করা, সময় মতো না পাওয়া, রিটার্ন নিয়ে ঝামেলা, ক্যাশ অন ডেলিভারির টাকা সময় মত না পাওয়া… এমন হাজারো সমস্যা আমাদের দেশে আছে। ইনফ্যাক্ট বাইরেও এই সেইম সমস্যা গুলা ফেইস করা লাগে। বিজনেস করতে গেলে সমস্যা হবে এবং এইগুলোর জন্য লস হবে এইটা মেনে নিয়েই বিজনেসে আসতে হবে। সমস্যা আছে বলেই সমাধান এর জন্য নতুন নতুন কোম্পানি চালু হবে এবং মানুষ পয়সা খরচ করতে রাজি হবে।

যেকোনো বিজনেসের জন্য তার লজিস্টিকস হচ্ছে ৯৮% ইমপ্যাক্ট ফেলে। অ্যাপ, ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার এইসব আমার হিসেবে জাস্ট ২% ভ্যালু এড করে। লজিস্টিকস হচ্ছে সব এনালগ জিনিস। ডিভাইস, কমপিউটার, ইন্টারনেট এর বাইরে যা আছে, সবই লজিস্টিকস। সাপ্লাইয়ার, ডেলিভারি ম্যান, গাড়ি, ভ্যান, কারখানা, ইনভেস্টর সব কিছু এক না একভাবে লজিস্টিকস এর মধ্যে এসে যায়। কোম্পানির মালিক হিসেবে আপনি কিভাবে কী ম্যানেজ করছেন তাও এই লজিস্টিকস এর মধ্যেই একভাবে এসে যাবে।

এই লজিস্টিকস যদি আপনি ভালোভাবে না বুঝেন, বিজনেস আপনাকে দিয়ে হবে না।

ভাই আমি তো বিজনেসই করি সফটওয়্যার এর! আমার আবার লজিস্টিকস কী?

সফটওয়্যার কোম্পানির জন্য হিউম্যান ম্যানেজমেন্ট, তাদের জন্য রিসোর্স এলোকেট করা, অ্যাভেলেবিলিটি এনসিওর করা সহ অনেক ধরনের লজিস্টিক্যাল রেসপনসিবিলিটি থাকে। একটু মনোযোগ দিয়ে যখন চেষ্টা করবেন, দেখবেন এমন ছোট ছোট অনেক জিনিস পাবেন যা ইমপ্রুভ করা সম্ভব। অফিসে সামান্য কফি সার্ভ করা বা একটু কমদামি বিস্কুটের ইমপ্যাক্ট ও পড়ে।

আমার কাছে দারাজ যেভাবে তাদের লজিস্টিকস প্ল্যান করেছে সেটা দেশের পার্সপেকটিভ এ বেস্ট মনে হয়। তারাও এখনো লাভের মুখ দেখেছে কী না আমি শিওর না। কিন্তু তাদের ক্যালিবার আছে প্রপার ইনভেস্টমেন্ট করা, সময় নেওয়া এবং লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জ খুব প্ল্যান করে সলভ করার।

দারাজ কিভাবে সমাধান করছে?

দারাজ নিজেরা গাড়ি কিনেছে এবং নিজস্ব লোক দিয়ে গাড়ি লোড আনলোড করে রাতের বেলা। মাঝরাত থেকে ফজর পর্যন্ত সারা দেশেই একটা উইন্ডো পাওয়া যায় যখন রাস্তায় জ্যাম কম থাকে এবং দ্রুত মুভ করা যায়। হাব বা অফিসের ভাড়া তো আপনি ২৪ ঘণ্টার জন্যই দেন। তাহলে দিনে শুধু ৮ ঘণ্টার জন্য ব্যবহার করে বাকি সময় বন্ধ ফেলে রাখা কিন্তু রিসোর্স লস করা। খেয়াল করে দেখবেন তাদের হাব গুলো এমন জায়গাতে করা হয়, যেখানে দিন রাত সব সময় পিকআপ পার্ক করে লোড আনলোড করা সম্ভব।

ফুড ডেলিভারি বিজনেস কেন চলছে না?

কোন একটা আন অফিসিয়াল আলোচনায় শুনেছিলাম যে ডিসকাউন্ট কুপনের জন্য নাকি অনেক বড় একটা এমাউন্ট খরচ হয়। এর সত্যতা আমি জানি না। আর খরচ যে সব সময় পকেটের থেকে নগদ পয়সা বের হলেই খরচ জিনিসটা এমন না। আপনি যদি একাউন্টিং পড়েন, তাহলে লায়াবিলিটি আর এসেটের হিসাব সম্পর্কে আইডিয়া থাকার কথা। সার্ভিস না দিয়ে পকেটে অগ্রিম টাকা ঢুকলে সেটা দেনা না। সেটা হচ্ছে দায়। ধারের মতো। তাই ডিসকাউন্টের কারণে রেভিনিউ কম হলে সেটা বিজনেসের সেন্স এ খরচ। কারণ ডিসকাউন্ট না দেওয়া লাগলে রেভিনিউ বেশি আসতো।

ফুডপান্ডা সম্ভবত রেস্টুরেন্ট এবং হোম কুকদের কাছ থেকে ২৫% পর্যন্ত কমিশন নেয়। মাস শেষে বা সপ্তাহ শেষে টাকা দেয়। ওইদিকে কাস্টমারের কাছ থেকে ডেলিভারি ফি নিচ্ছে ২০-৩০ টাকা। সাথে প্ল্যাটফর্ম ফি আর ভ্যাট। ডেলিভারি ম্যান পাচ্ছে সম্ভত ৬-১৫ টাকা।

এক দিকে রেস্টুরেন্ট মালিকদের অভিমান আয়ের ৪ ভাগের ১ ভাগ চলে যায় কমিশনে। প্যাকেজিং এও ভালো খরচ হয়। ওইদিকে ডেলিভারি ম্যান লেট করলে বা কেয়ারফুলি হ্যান্ডেল না করলে ব্যাড রিভিউয়ের ভার তাদের উপর পড়ে।

অন্যদিকে ডেলিভারি ম্যান চেষ্টা করে ৩-৪ টা অর্ডার জমিয়ে একসাথে দিয়ে কম সময়ে বেশি আয় করার জন্য। এই করতে গিয়ে লেট হয়। খবর ঠান্ডা হয়। চাপে পড়ে প্যাকেট থেকে খাবার বের হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায়।

এই জন্য রেস্টুরেন্ট মালিক খাবারের দাম অনলাইন অর্ডারে বেশি নিচ্ছে। কাস্টমারও চিন্তা করে অ্যাপ ব্যবহার না করে নিজে যাওয়া আসার পথে পিক করি বা অফিসের কাউকে পাঠিয়ে ধারে কাছে যা পাওয়া যায় তাই আনাই।

এর মধ্যে একটা মেজর কারণ হচ্ছে ঢাকায় বা অন্যান্য অনেক শহরে আমাদের বিনোদনের অপশন বলতে রেস্টুরেন্ট ছাড়া আর কিছু নাই। এই জন্য রেস্টুরেন্ট মালিকরা অনেক খরচ করে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করছে। মানুষ রেস্টুরেন্ট এ আসলে মিউজিক, ঘ্রাণ, প্রেজেন্টেশন, সার্ভিস, এমনকি সামান্য চামচ বা টেবিল ক্লোথ দিয়ে ইমপ্রেস করা যায়, হুক করা যায়। বিল, অর্ডার ভলিউম, এমাউন্ট বাড়ানো যায়। এইসব কন্ট্রোল অনলাইন ডেলিভারিতে নাই।

এই এতোকিছু মিলিয়ে তাই এখন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ এর ভলিউম এখন ৩ ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে।

লজিস্টিকস ব্যবসায়ের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং অনলাইন কেনাকাটার প্রবণতা

লজিস্টিকস খাতের জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ।

লজিস্টিকস ব্যবসায়ের চ্যালেঞ্জ

জটিল ব্যবসায়িক মডেল এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের প্রয়োজন

প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার

সফল লজিস্টিকস ব্যবসার জন্য টিপস

দৃঢ় ব্যবসায়িক পরিকল্পনা

সঠিক বাজার গবেষণা

দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ

পিক আপ এবং ড্রপ

ট্রাকিং

ম্যানেজমেন্ট

টেকনোলজি

Comments

Leave a Reply