সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করা এবং টিম মেইনটেইন করা সহ কাজ করছি প্রায় ৩ বছর যাবৎ। তাই নিজে যতটুকু জানি সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য সিরিজ পোস্ট লেখার পরিকল্পনা করছি। ক্যারিয়ার নিয়ে ডিসিশন নিতে কাজে লাগতে পারে। যেকোনো প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য করতে পারেন।
যা যা আলোচনা করা হয়েছে
সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার জবটা আসলে কি?
সফটওয়্যার কোম্পানি গুলো সাপোর্ট স্টাফদের বিভিন্ন নামে পদবি দিয়ে থাকে। যেমন সাপোর্ট নিনজা, সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার, হ্যাপিনেস ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি। এখানে প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে যারা আপনার কোম্পানির প্রোডাক্ট কিনছে, তাদের সেই প্রোডাক্ট কেনার আগে তথ্য দেয়া থেকে শুরু করে, ইনস্টল করা, কনফিগার এবং ব্যবহারের জন্য গাইড করা। মোট কথা কাস্টোমারের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে। কথা বলা আপনার প্রধান কাজ।
যে প্লাটফর্মে কাজ করবেন, সেটার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা আর নির্ভুল ইংরেজি লিখতে জানলেই আপনি মোটামুটি এন্ট্রি লেভেলে এপ্লাই করার যোগ্য। এরপরে দরকার শুধু ধৈর্য আর আগ্রহ। এই দুইটি গুন থাকলেই সামনে আগাতে পারবেন
কি কি স্কিল থাকতে হবে?
ভালো ইংরেজি
খুব ভালো ইংরেজি না জানলে, গ্রাহক কি বলছে সহজে তো বুঝবেন-ই না, যা বলতে চাচ্ছেন, তাও সঠিকভাবে গুছিয়ে বলতে পারবেন না।
যেহেতু আপনার মূল কাজ-ই হচ্ছে কথা বলা, তাই গুছিয়ে ভালো ইংরেজি লিখতে পারার বিকল্প নেই। যদি ভালোভাবে বলতেও পারেন, তাহলে সেটা হবে আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট। তবে মনে রাখবেন, এটা সেমি ফরমাল কাজ। অর্থাৎ, ভাই বন্ধুর সাথে যেরকম শব্দ ব্যবহার করি (yo bro/man, wassup, screwed), বা মুভিতে যেভাবে কথা বলতে দেখি (yo nigga), এমন শব্দ ব্যবহার করে কথা বলা যাবে না। শালীনতা বজায় রেখে কথা বলতে হবে। হোক সেটা মেইল, লাইভ চ্যাট বা অন্য যেকোনো যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম। সবসময় মনে রাখতে হবে আপনার কথা আপনার কোম্পানির পরিচায়ক। ভালো বললে সেটা কোম্পানির ইমেজের উপর প্রভাব ফেলবে, খারাপ ভাবে বললে সেটাও। তাই বলে আবার অতি ফরমাল দাঁত ভাঙা শব্দ বা কঠিন Phrase ব্যবহার করা উচিত না। কারন ইংরেজি জানেনা, এমন অনেকে আপনার সাথে গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে কথা বলবে।
আমি নিজে সব সময় শব্দ চয়নের দিকে গুরুত্ব দেই। কারন সঠিক শব্দ চয়ন আপনার ব্যাক্তিত্ব তথা আপনার প্রফেশনালিজম ও অভিজ্ঞতার পরিচয় দেয়। যেমন I can not help না বলে আপনি যদি বলেন I am unable to help, তখন আপনার কথার টোন অনেক মার্জিত শোনাবে এবং গ্রাহককে উত্তেজিত হওয়ার সুযোগ দেবে না। তাই ভালো ইংরেজি অবশ্যই জানতে হবে। এটা কেউ ছোট বেলা থেকে অনুশীলন না করলে বড় বেলায় এসে ৬ মাস ১ বছরে শেখানো সম্ভব না। তাই এটাকে লিস্টের ১ নাম্বারে রাখছি।
ধৈর্য
আপনার যদি এর আগে কাস্টোমার সাপোর্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই জানেন যে কাস্টোমার সাপোর্ট এজেন্টের মুল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার যথেষ্ট ধৈর্য থাকতে হবে। কারন একজন মানুষ কখনো সমস্যা বা বিপদে না পড়ে সাপোর্ট টিমের শরণাপন্ন হয়না। আর বিপদের সময় মানুষের মধ্যে সচরাচর ভদ্রতাবোধ কাজ করে না। তাই বেশি বিরক্ত হয়ে বা রেগে গিয়ে F word ব্যবহার করতে পারে। মেজাজ খারাপ না করে তার কথা ঠাণ্ডা মাথায় শুনতে হবে এবং বিনয়ের সাথে উত্তর দিতে হবে।
অন্যদিকে, যখন আপনি প্রি-সেলস বিভাগে হবু গ্রাহকের সাথে কথা বলছেন, তখন প্রায় সময়ই এমন হয় যে গ্রাহক নন-টেকি পার্সন। সে একটা হাঁস আর একটা ঘোড়া মিলিয়ে একটা বিমান বানাতে চাইবে এবং বিশাল বড় এক মেইল লিখে জানতে চাইবে, “তোমার সফটওয়্যারটা দিয়ে হাঁসটার সাথে ঘোড়াটা বাঁধা যাবে?”
আপনাকে সেই মেইল ধৈর্য ধরে পড়ে সুন্দর করে বলতে হবে, আমরা আমাদের সফটওয়্যার এর সাথে কখনো হাঁস আর ঘোড়া বাঁধা টেস্ট করিনি। তুমি চাইলে দুইটাকে আমাদের কাছে পাঠাতে পারো; আমরা টেস্ট করে তোমাকে বিস্তারিত জানাবো।
অনেক সময় এমনও হয়েছে যে, “হিটলার” এক ডেভেলপার হয়তো আপনাদের প্রোডাক্ট পছন্দ করেছে; বিশাল এমাউন্টের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিবে। সাপোর্ট সিস্টেম টেস্ট করার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে আবোল-তাবোল মেইল দিয়ে রেসপন্স টাইম, সার্ভিস কোয়ালিটি ইত্যাদি চেক করছে।
আপনি কখনোই আগে থেকে জানতে পারবেন না, আপনার কোন একটি কথা কোম্পানিকে হাজার ডলারের লাভ করাতে পারে, আর আপনার উত্তর না দিয়ে ক্লোজ করে দেওয়া একটা টিকেট থেকে হয়তো কোম্পানির হাজার ডলারের সেল নষ্ট করবে। উদ্ভট আইডিয়ার মেইলে রাগ করে দেয়া রিপ্লাই নিয়ে ধরেন একজন একটা ব্লগ পোস্ট লিখে ফেলল। বা সাপোর্ট সার্ভিস টেস্ট করতে চাওয়া মেইলে আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে হয়তো কেউ আপনার ম্যানেজারের কাছে অভিযোগও করে বসতে পারে।
তাই প্রশ্ন যেমনি হোক, প্রতিটির উত্তর ধৈর্য ধরে ঠাণ্ডা মাথায় সুন্দর করে দিতে হবে।
সৃজনশীল চিন্তা
বেশির ভাগ সময় কমন কাজে বিল্ট ইন ফিচার দিয়ে কাজ হয়ে যায়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে অনেক ফিচার মডিফাই করে ব্যবহার করা যায়। প্রি-সেলস সাপোর্টে কাজ করলে উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সাজেশন দিয়ে প্রোডাক্টের উপযোগ তথা সেলস বাড়ানো যায়।
উদাহরণ স্বরূপ- আপনি আটা বিক্রি করছেন। আপনি জানেন আপনার কাছ থেকে সবাই রুটি বানানোর জন্য আটা কিনে। কিন্তু হঠাৎ এক বিরিয়ানির দোকানদার এসে আপনাকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার বিরিয়ানির ডেকচি সীল করার জন্য কিছু একটা খুঁজছি। রাবারের সীল নেয়া যেত, কিন্তু সাইজে মিলছে না। তোমার আটা দিয়ে কি কোন সাহায্য করতে পারবে?”
আপনার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা থাকলে চিন্তা করবেন আটার কাই নরম, তাই এয়ারটাইট সীল হিসেবে ইউজ করা যাবে। আর সাইজ নিয়েও টেনশন নাই।
ব্যাস, বুদ্ধি করে সমাধান দেয়ার কারনে নতুন একটা গ্রাহক পেয়ে গেলেন। আর গ্রাহকও অল্প খরচে ভালো সমাধান পাওয়ার কারনে ভালো রিভিউ পোস্ট করলো, এতে করে নতুন আরও গ্রাহক বাড়বে।
এই তিনটি বিষয় হচ্ছে এখন সাপোর্ট স্টাফের মূল গুনাবলি এবং এগুলো অবশ্যই থাকতে হবে। এই ৩ টি স্কিল ছাড়া একজন সাপোর্ট স্টাফ অসম্পূর্ণ।
আপাতত ওয়ার্ডপ্রেস সংশ্লিষ্ট প্লাগিন, থিম বা সেবার জন্য সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আবেদনের প্রস্তুতি শুরু করার জন্য নিচের চেকলিস্টটি দেখতে পারেন-
চেকলিস্ট
- কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করে?
- থিম ও প্লাগিন কিভাবে ইনস্টল করে?
- থিমের কাজ কি?
- প্লাগিনের কাজ কি?
- থিম আর প্লাগিনের পার্থক্য কি?
- ওয়ার্ডপ্রেস এর কোথায় কোন সেটিংস আছে?
- কোন সেটিংস এর কাজ কি?
- WordPress.org এর বেসিক কিছু প্লাগিনের কাজ জানা।
- বেসিক কিছু প্লাগিন ইনস্টল ও কনফিগার করে টেস্ট করা।
- যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করছেন, তাদের কাজ সম্পর্কে জানা।
- যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করছেন, তাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে পাবলিকলি এভেইলেবল যত তথ্য আছে, তা যতবেশি সম্ভব পড়া।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.