Do what you love; love what you do কথাটা অন্তত একবার হলেও আমরা শুনেছি। তবে কখনো কি একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখেছি যে আসলে কথা দুইটা দিয়ে কি বোঝানো হচ্ছে বা আমরা কিভাবে এটা ফলো করতে পারি?
যা করতে ভালো লাগে তাই করো
ভালোলাগা বা ভালোবাসা জিনিস টা নির্ণয় করা আমার কাছে অনেক কঠিন মনে হয়। কাজ করা শুরু করেছি প্রায় ৭ বছর হয়ে গেছে। কাজ নিয়ে ভাবছি সেই ক্লাস ফোর থেকে। ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করছি ক্লাস এইট থেকে। কিন্তু এখনো আমি কি করতে ভালবাসি তা খুঁজে পাইনি। মানুষের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে, নতুন যায়গায় ঘুরতে ভালো লাগে, নতুন কিছু জানতে পড়তে ভালো লাগে। তবে এসব দিয়ে কিভাবে নিজের জন্য একটা ক্যারিয়ার কিভাবে করা যায় সেই ডট গুলো এখনো কানেক্ট করতে পারিনি।
তবে এতবছর পর কথাটার মানে আজকে উপলব্ধি করতে পেরেছি। ফেসবুকে কেউ একজন aNImaKe এর স্টোরি শেয়ার দিয়েছিল। এই স্টার্টআপ এর প্রতিষ্ঠাতা তার নিজের ছেলের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন। ডাক্তাররা বলেছিল তার ছেলে কখনো হাঁটতে পারবে না। সে নিজে গবেষণা করে ছেলের জন্য প্রোসথেটিকস তৈরি করেছে থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে। এই গল্পটা দেখেই আমি উপলব্ধি করলাম আসলে একজন মানুষের মাথায় যখন এই ধরনের তাড়না কাজ করে, ঠিক তখনি নাওয়া খাওয়া ভুলে দিন রাত এক জিনিসের পেছনে লেগে থাকা সম্ভব। নিজের ছেলের সমস্যা সমাধান করে যখন তিনি কমার্শিয়ালি আরও অগণিত সন্তানের জন্য কাজ করা শুরু করেছেন, তখনো কিন্তু এতো গভীর ইমোশন কাজ না করলেও অনেক খানি করবে। কারণ এখানে মানুষের জীবন জড়িত। মানুষের ভবিষ্যৎ জড়িত। সে চাইলেই একটা মানুষের জীবনের কাহিনী বদলে দিতে পারে। এই ধরনের ড্রাইভিং ফোর্স সব ধরনের কাজে ফিল করা সম্ভব না।
কাজ ভালো লাগানোর জন্য আমাদের ভাবতে হবে আমার কাজে আসলে কি ধরনের ইমপ্যাক্ট হচ্ছে। এই জন্য নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি-
১। আমি আসলে কার জন্য কাজ করি? (এনজিওকর্মী তার বসের জন্য কাজ করেন না। দুস্থ দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করেন।)
২। আমার কাজে কি ধরনের রিস্ক রয়েছে?
৩। আমার দায়িত্বে অবহেলার জন্য কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
টাকার পিছনে আমি শুরু থেকেই ছুটছি। ২০০ টাকা বেতন থেকে শুরু করে এখন দেশের সর্বোচ্চ গ্রেডের স্যালারি। কিন্তু টাকা আমাকে কখনো শান্তি দেয়নি। টাকা আয় করে, জমিয়ে, খরচ করে সব ধরনের চেষ্টা করেছি। আমার মতে টাকা আসলে কাজের জন্য বা ক্যারিয়ারের জন্য কোন ফ্যাক্টরই না। কারণ টাকার পিছনে ছুটলে শুধু ছুটতেই পারবো। টাকা হচ্ছে সংখ্যা আর সংখ্যার কোন শেষ নেই।
প্যাশন নিয়ে কোন কাজ করলে সেই কাজ পারফেক্ট হতে বাধ্য আর পারফেক্ট কাজের জন্য পারফেক্ট দাম অবশ্যই পাওয়া যায়। মানুষের জন্য যেকোনো একটা সমস্যার সমাধান করতে হবে এই মনোভাব নিয়ে কাজ খুঁজলে যথেষ্ট পরিমাণ কাজ পাওয়া যাবে। পৃথিবীতে সমস্যা অসীম। টাকার কথা চিন্তা করে কাজ করলে সমাধানের অংশ হওয়ার বদলে সমস্যার অংশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
যা করো ভালোবেসে করো
ক্যারিয়ারের শুরুতেই হয়তো বুঝা সম্ভব না যে ঠিক কোন ধরনের ইন্ডাস্ট্রি বা কাজ আমার ভালো লাগে; ঠিক যেমন একটা মানুষকে প্রথম দেখেই প্রাণের থেকে বেশি ভালোবাসা সম্ভব না। এইজন্য যে কাজ একটু সহজ মনে হয় বা করার সুযোগ পাওয়া যায়, সেই কাজ দিয়ে শুরু করতে হবে আর চেষ্টা করতে হবে ভালো লাগানোর। অর্থাৎ ওপেন মাইন্ড নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। কারণ কোন কাজটা যে আসলে ভালো লাগবে, কোনটা যে ক্যারিয়ারের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায় হবে, কেউ তা জানে না। তাই যে কাজই করি, নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করি। ভালো না লাগলে সুইচ করার অপশন সব সময়ই থাকে। কাজ করতে না চাইলে কাউকে ধরে রাখা সম্ভব না।
তবে এই ক্ষেত্রে আমি একটা নিয়ম সব সময় মানি। যেকোনো কাজে অন্তত ১ বছর সময় দেওয়া উচিত। অনেক বেশি সুইচ করতে থাকলে নিজের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হবে। তখন আবার সম্ভাবনা থাকবে ভালোলাগার পিছনে ছুটার। এইভাবে অধৈর্য হয়ে ছুটতে থাকলে ভালোলাগা আর কখনো পাওয়া হবে না। অস্থিরতায় জীবন চলে যাবে।
এই লেখা গুলো আসলে আজকে আমার ব্যাক্তিগত চিন্তাভাবনা। আপনার কাছে যদি মনে হয় এই চিন্তাভাবনায় আরও উন্নতি আনা সম্ভব, কমেন্টে জানাতে পারেন। আপনার যদি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, সেটাও জানাতে পারেন। ডিপ কথাবার্তা শোনার জন্য আমার অফুরন্ত সময় 😀
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.